★★★★★★
রাতে কম্বল ছাড়া ঘুম আসতে চায় না --এটা রুদ্রের একটা অভ্যাস। হাড়হিম করা শীত বা স্যাঁতস্যাঁতে গরম; সে যাই হোক-না কেন। কম্বলটি শরীরে ওঠানামা করতে থাকে সারাবছর।
রুদ্রের বয়স আন্দাজ ত্রিশ, পেশায় শিক্ষক। বিয়ে করেনি এখনো। পুরানো এই কাঠের ঘরটিতে একাই থাকে।
সেদিন রাতে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল রুদ্রের। আচমকা সচেতন হয়ে উঠল শরীরের সবকটি ইন্দ্রিয়। একটি সরীসৃপের মতো কিছু শরীর বেয়ে উঠছে বলে মনে হচ্ছে। নাকি অন্য কোনো জীব! ঠিক ঠাহর করতে পারল না রুদ্র। জীবটি পায়ের দিক থেকে মাথার দিকে উঠে আসছে ক্রমশ।
'চাঁদের পাহাড়'-এ শংকরের সেই ঘটনাটা বিদ্যুত-বেগে রুদ্রের মাথায় খেলে গেল। সেখানে শংকরের হাতে অবশ্য টর্চ ছিল, কিন্তু রুদ্রের টর্চ নিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। ভাবল একটু বিছানা হাতড়ে দেখবে কি? যদি কিছু একটা পায় হাতের নাগালে। টর্চ বা মোবাইল, কিছু-একটা হলেই এখন চলত।
কিন্তু কী আশ্চর্য ! রুদ্র হাত-পা কিছুই নড়াতে পারছে না। কম্বলের তলায় শরীরটা কেমন যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। আঙুলগুলিও অসার। শরীরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে সে।
এদিকে বাইরে অঝোরে বৃষ্টি। সঙ্গে হাওয়ার শোঁ শোঁ শব্দ। উপরে টিনের চালে বারবার আছড়ে পরছে বাইরের লিচুগাছটির দু'টি ডাল। যেন পিশাচের দল তান্ডব-নৃত্য করছে।
রুদ্র একবার ভাবল, দুঃস্বপ্ন দেখছে না-তো ! ডিনারের কষা-মাংসটা কি হজম হয়নি রুদ্রের! তাই কি এসব উল্টোপাল্টা স্বপ্ন! নাঃ, কম্বলের তলায় চোখ খুলে বুঝল সে জাগ্রত, সচেতন। আজ ঘরের অন্ধকারটাও বড্ড বেশি। যত বেশি অন্ধকার, তত বেশি সজাগ হয়ে ওঠে মানুষের চোখ ও কান।
বুকের উপর সেই জীবটির ভার একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হল রুদ্রর। পা-হাঁটু-নাভি হয়ে বুক পেড়িয়ে এটি কি তাহলে রুদ্রের মুখের কাছে চলে আসছে !
শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। হৃদপিণ্ডটা এর আগে এভাবে কোনোদিন ঢিপঢিপ করেনি রুদ্রের। বাম গালে একটি আলতো স্পর্শ অনুভব করল রুদ্র।
এইবার আর চুপচাপ থাকা চলে না। ভেতরের ইচ্ছাশক্তিকে জাগিয়ে তড়াক করে উঠে বসল বিছানায়। সন্তর্পণে লাইট জ্বেলে দেখল, কোনোদিকে কিছুই নেই। ধড়ে যেন প্রাণ এল।
ঢকঢক করে একগ্লাস জল শেষ করল রুদ্র। ঘড়িতে দেখে নিল তখন সময় তিনটা বেজে দশ। এরপর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ঘটনাটা আবার প্রথম থেকে ভাবতে লাগল। কিন্তু কূল-কিনারা কিছুই পেল না। রাত অনেক বাকী। আবার ঘুমোতে গেল রুদ্র। তবে মনে একটা খটকা রয়েই গেল।
পরদিন সকালে রুদ্র বাথরুমের আয়নায় যা দেখল তাতে তাঁর বুকটা ধড়াস করে উঠল। রুদ্র আবিষ্কার করল ঠোঁটের নীচে একটা ক্ষতচিহ্ন। রক্ত জমাট বেঁধে আছে। ততক্ষণে তাঁর শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা হাওয়ার স্রোত পায়ের পাতা পর্যন্ত নেমে গিয়েছে।
হঠাৎ আজকের সংবাদপত্রটি বারান্দায় এসে আছড়ে পরল। পেপারবয় উদ্বেগের সাথে জানাল , "রুদ্রদা, ভাগাড়ের মাংস বিক্রির অভিযোগে ধৃত 3, এই পাড়ারই ঘটনা।"
★★★★★★★
Comments
Post a Comment