Skip to main content

Golpo: মাঝরাতের সেই মুখ


মাঝরাতের সেই মুখ
---- মঞ্জুল তালুকদার।

    ডিসেম্বরের কনকনে শীতের রাত। গাড়িতে সহযাত্রীরূপে এক ব্যক্তিকে পেয়েছি। অদ্ভুত চেহারার, মুখখানা ছাগলের মতো। মনে হচ্ছে জীবন্ত এক পিশাচ! কী বিশ্রী, কী ভয়ানক ওই চেহারা। যেন কোনো দুর্ঘটনায় থেঁতলে গেছে মুখখানা। লোকটির শরীর দিয়ে তাজা রাসায়নিকের উগ্র বোটকা গন্ধ।

    মানুষেরও আবার ছাগলের মতো মুখ হয় নাকি! কিন্তু নিজের চোখে যা দেখেছি তা অবিশ্বাস করি কীভাবে?

    ঘটনাটা তাহলে শুরু থেকেই বলি। সেদিন রাতে আলিপুরদুয়ার জংশন স্টেশনে নেমেছি। রাত তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা । ট্রেন থেকে নেমে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একটি বাসে চড়ে বসেছি। গন্তব্য জয়ন্তী। এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে যাচ্ছি। এমনিতে এতো রাতে এই রুটে বাস থাকে না। গ্যারেজ থেকে গাড়িটি ফিরছিল। বাসের যাত্রীসংখ্যা মাত্র কয়েকজন। কন্ডাক্টর বললেন, জয়ন্তী এখান থেকে ঘন্টাখানেকের পথ।

    ডিসেম্বর মাসের শীত জাঁকিয়ে পড়েছে। ডুয়ার্সের ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া চারিদিক। কালো পিচঢালা রাস্তা ও ঘন অন্ধকারের বুক চিরে বাসটি এগিয়ে চলেছে। রাতের হাড়-হিম করা শীতল বাতাস আলপিনের মতো গায়ে বিঁধছে। এতোটাই শীত যে টুপি-জ্যাকেটও হার মেনেছে। বাসটি দ্রুত ছুটে চলেছে গন্তব্যের দিকে।

     আমার পাশের সিটেই বসেছিল মানুষের মতো দেখতে সেই মূর্তিটি । চাদরে মুখ ঢাকা। অবশ্য চাদরে সবটা মুখ ঢাকা পড়েনি। দূর থেকে মনুষ্য-আকৃতির মনে হলেও কাছ থেকে দেখলে এই মনুষ্য-অবয়বটি পুরোপুরি মানুষ কিনা সন্দেহ হয়। এমনও যে মানুষের মুখ হতে পারে তা ভয়ংকরতম ভূতের গল্পেও পাওয়া যায়না ।

      যাত্রীটি সম্পর্কে কৌতূহল বেড়েই চলেছে মনে। মনুষ্য-অবয়বযুক্ত মূর্তিটির ঠোঁট বলে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। নাসিকা-গহ্বর দু'টি যেন খুলে রাখা মোটা দু'টি জলের পাইপ। অনবরত নাসারন্ধ্র দিয়ে সজোরে দম নিচ্ছে সে। মুখের নিচের দিকে একগুচ্ছ চুল ঝুলে রয়েছে, তা থেকে ওর চোখের ভ্রূ-দুটিতে বেশি চুল বলে মনে হচ্ছে। আর আমরা যেটা মুখমণ্ডলে গাল বলে জানি, ওর তেমন কিছুই নেই। মনে হচ্ছে তিনদিন আগের একটি লাশ শ্মশান থেকে উঠে আমার পাশে এসে বসেছে। যার এখনও সৎকার না-হওয়ায় মুখখানা বিকৃত হয়ে গেছে। ভয়ে ও ঠান্ডা - এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে কাবু হয়ে পড়ছি। বুকের পাঁজর হিম হয়ে আসছে আমার।

    একটা মোড় ঘুরতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে গেল চলন্ত বাসটি। হঠাৎ অন্ধকারে প্রশ্ন ধেয়ে এলো আমার দিকে, "ও দাদা! খৈনি হবে নাকি?" প্রথমটায় ভয়ে সর্বাঙ্গ শিউরে উঠল। লোকটির কন্ঠস্বর বেশ সপ্রতিভ, সাধারণ মানুষের মতোই। কথাবার্তায় কোনও জড়তা নেই। "না, আমি খৈনি খাই না ", উত্তর দিলাম।
     একটু পরে কন্ডাক্টর কাছে এলে চাদরের ভিতর থেকে কচ্ছপের মতো মুখটা বের করল এবং কী যেন অখ্যাত একটা জায়গায় নাম বলল। ভাড়া মিটিয়ে মুহূর্তে আবার মুখটা লুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল।
   
      ঘড়িতে সময় এখন রাত 12টা। জয়ন্তী বাস স্টপেজের আগেই হঠাৎ একটা জায়গায় ড্রাইভার ব্রেক কষলেন। লোকটি উঠে দাঁড়াল ও মুখোশটি খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "ডুয়ার্স মেলা থেকে ফিরছি, বাচ্চার জন্য মুখোশটা কিনেছিলাম। যা ঠান্ডা পড়েছে দেখলাম, ঠোঁট-কান-নাক বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছিল। যাক, এইযাত্রা মুখোশটা বাঁচালো।" হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম লোকটির মুখের দিকে।

কবি মিল্টন তো কবেই বলে গিয়েছেন - “The mind is its own place, and in itself can make a heaven of hell, a hell of heaven..”

Comments

Popular posts from this blog

সমাস উচ্চমাধ্যমিক ও সংস্কৃত SLST

#Sanskrit_SLST #ব্যাকরণ #সমাস (40টি উদাহরণ)  ~~~~~~~~~~ * বিশালাক্ষঃ = বিশালে অক্ষিণী যস্য সঃ ( বহুব্রীহি ) বৃক্ষচ্ছায়া - বৃক্ষস্য ছায়া ( ষষ্ঠী তৎপুরুষ )  নক্তন্দিবম্ = নক্তং চ দিবা চ ( দ্বন্দ্ব ) রাজপুত্রঃ = রাজ্ঞঃ পুত্রঃ ( ষষ্ঠী তৎপুরুষ ) পদকমলম্ - পদম্ এব কমল ( রূপক কর্মধারয় ) গ্রামান্তরম্ = অন্যঃ গ্রামঃ ( নিত্য সমাস ) রামানুজঃ = রামস্য অনুজঃ ( ষষ্ঠী তৎপুরুষ )  * চক্রপাণিঃ = চক্রং পাণৌ যস্য সঃ ( বহুব্রীহি ) * পিতৃসমঃ = পিত্রা সমঃ ( তৃতীয়া তৎপুরুষ )  * একোনঃ = একেন উনঃ ( তৃতীয়া তৎপুরুষ ) * বিপন্মুক্তঃ = বিপদঃ মুক্তঃ ( পঞ্চমী তৎপুরুষ ) * দূরাগতঃ = দুরাৎ আগতঃ ( পঞ্চমী তৎপুরুষ )  * বিদ্যাস্নাতকঃ = বিদ্যায়াঃ স্নাতকঃ ( ষষ্ঠী তৎপুরুষ )  *বলাহকঃ = বারীণাং বাহকঃ ( ষষ্ঠী তৎপুরুষ )  * কলাকুশলঃ = কলায়াং কুশলঃ ( সপ্তমী তৎপুরুষ )  * সভাপণ্ডিতঃ = সভায়াং পণ্ডিতঃ ( সপ্তমী তৎপুরুষ )  * দুর্জনঃ = দুষ্টঃ জনঃ ( প্রাদি তৎপুরুষ )  * প্রাচার্যঃ = প্রগতঃ আচার্য ( প্রাদি তৎপুরুষ )  * প্রপিতামহঃ = প্রগতঃ পিতামহঃ ( প্রাদি তৎপুরুষ )  *উরগঃ = উরস...

ব্যাসকূট 01

#ব্যাসকূট_১ বৃহত্তম মোচ্ছব চলছে। এবার আশিকোটি নিমন্ত্রিত। অনেক আশা নিয়ে এবারও সকলের সাথে একে একে ভিড় করেছে এক ক্ষুধার্ত বৃদ্ধ, এক গরিব চাষা, এক অপুষ্ট শিশু ও এক শিক্ষিত বে...